বিশ্বজুড়ে ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ভেগানিজম। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও প্রকৃতিতে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে খাদ্য, পোশাক—এসবের জন্য প্রাণীর ওপর নির্ভরতা কমাতে আগ্রহী হচ্ছে মানুষ। অন্যদিকে প্রাণীর প্রতি নৃশংসতা কমাতেও প্রাণিজ আমিষ বর্জনে আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু তাই বলে চিংড়ির দোপেয়াজি, গরুর মাংসের ভুনা, মুরগির রোস্ট, খাসির কোফতা—এগুলোর স্বাদ থেকে কি বঞ্চিত থাকবে ভোজনবিলাসী মানুষ?
এই দুই সংকটের এক সহজ সমাধান পাওয়া গেল ভিডিও ব্লগ ‘নাস ডেইলি’র সাম্প্রতিক পর্বে। পাঁচ বছর ধরে বিশ্বের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে ধারণ করা ভিডিওতে দেখানো হয়েছে প্রাণী হত্যা না করেও কীভাবে প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন করা যায়। আরও তুলে ধরে হয়েছে, এসব বিষয়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন গবেষণার অভাবনীয় অগ্রগতি।
শুনতে কেমন লাগলেও কথাটা সত্যি। অনেকেই প্রাণী হত্যা বন্ধ করতে মাংস খাওয়া বন্ধ করে নিরামিষাশী হতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। খাবারের জোগান দিতে কোনো প্রাণীকে যেন হত্যা করা না হয়, এই ছিল তাঁদের চাওয়া। সেই চাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে তৈরি হয়েছে ইসরায়েলি এক প্রতিষ্ঠান, নাম প্ল্যান্টিশ। তাদের ট্যাগলাইন ‘প্ল্যান্টস মেক দ্য বেস্ট ফিশ’, অর্থাৎ গাছপালাই বানাতে পারে সেরা মাছ! এই কোম্পানির সিইও, জীববিজ্ঞানী ওফেক রন ও তাঁর দল গবেষণাগারেই তৈরি করেছে স্যামন মাছ। আর সেটির জন্য সমুদ্রের জলটাও স্পর্শ করতে হয়নি। নিরামিষ থেকেই স্যামন মাছ বানিয়েছেন তাঁরা। ল্যাবরেটরিতে বানানো এই মাছের টুকরা স্বাদে স্যামনের মতোই। এমনকি পুষ্টিগুণও সামুদ্রিক স্যামনের সমান। ওফেক বলেন, ‘এখন এটা পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে আছে। আমরা যদি এটাকে বাজারজাত করতে পারি, তাহলে সমুদ্রে না নেমে, একটা মাছও না মেরে আমরাই হব বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্যামন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।’
জেরুজালেমকেন্দ্রিক আরেক প্রতিষ্ঠান রিডিফাইন মিটের সিইও এশ্চার বিন–শিট্রিটের দল উদ্ভিজ্জ উপাদানের সঙ্গে ল্যাবরেটরিতে উৎপন্ন কিছু স্বাদ, গন্ধ মিশিয়ে সফলভাবে তৈরি করছে মাংস। সম্প্রতি তারা একটি ‘ব্লাইন্ড ফুড ফেস্টিভ্যালের’ আয়োজন করেছিল। সেখানে ১০০ আমন্ত্রিত অতিথিকে ল্যাবে তৈরি মাংসের নানা পদ দিয়ে আপ্যায়ন করে তারা। মাংসগুলো যে প্রিন্টারে তৈরি, একজন অতিথিও তা ধরতে পারেননি। বরং খাওয়া শেষে বেশির ভাগ অতিথিই লিখেছেন, ‘খাবার সন্তোষজনক’, ‘খুব ভালো’, ‘চমৎকার’, ‘অমুক তরকারিতে ঝালটা একটু কম হয়েছে’!